উচ্চরক্তচাপ কী? উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রনের ঘরোয়া পদ্ধতি।
Writer: Shoaib Ahmed, Ariful Islam
Published: Sunday, 23 sep 2024

হৃদযন্ত্রের পরিচিতি

মানব শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৃদযন্ত্র। এটি আমাদের রক্তকে সারা শরীরে প্রবাহিত করে, অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। হৃদযন্ত্রের সুস্থতা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) কী?

উচ্চ রক্তচাপ, বা হাইপারটেনশন, হলো একটি অবস্থান যেখানে রক্তের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। রক্তচাপ দুটি সংখ্যায় মাপা হয়: সিস্টোলিক (হার্টের সংকোচন সময়) এবং ডায়াস্টোলিক (হার্টের বিশ্রামের সময়)। সাধারণত, সিস্টোলিক চাপ 120 মিমি এইচজিটি এবং ডায়াস্টোলিক চাপ 80 মিমি এইচজিটির নিচে থাকলে তা স্বাভাবিক মনে করা হয়।

উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ

উচ্চ রক্তচাপ প্রধানত দুটি প্রকারে বিভক্ত:

১. প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ (Primary Hypertension)

এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রকার এবং এর সঠিক কারণ জানা নেই। সাধারণত বয়স, বংশগতির প্রভাব, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার অভ্যাসের কারণে এটি হয়ে থাকে। প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং একে দীর্ঘমেয়াদী হাইপারটেনশন বলা হয়।

২. সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ (Secondary Hypertension)

এই প্রকার উচ্চ রক্তচাপের একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে, যেমন কিডনি সমস্যাগুলি, হরমোনাল পরিবর্তন, অথবা কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর চিকিৎসার জন্য মূল সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব

উচ্চ রক্তচাপ হৃদযন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক এবং চোখের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি অকার্যকরতার ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • নুনের পরিমাণ কমানো: দৈনিক 2,300 মিলিগ্রাম বা তার কম নুন গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
  • ফলের ও সবজির বৃদ্ধি: বেশি করে ফল ও সবজি খান, কারণ এগুলো পটাসিয়াম সমৃদ্ধ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • গবেষণামূলক খাদ্য: অল্প পরিমাণে শর্করা ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার খান।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

  • সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট মাঝারি শারীরিক কার্যকলাপ করুন, যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ

  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে চেষ্টা করুন। ওজন কমানো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।

৪. মানসিক চাপ কমানো

  • যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।

৫. অ্যালকোহল ও ধূমপান ত্যাগ

  • ধূমপান বন্ধ করুন এবং অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করুন।

উপসংহার

উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর সমস্যা, তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে আপনি আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবেন এবং দীর্ঘকাল সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন ।